দাবি মিটলেই ফের এক চাওয়া, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনে চক্রব্যূহে অসহায় রোগীরা
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: একের পর এক দাবি! এক দাবি মিটতে না মিটতেই হাজির হচ্ছে আরও দাবি। দাবির চক্রব্যূহে ঘুরপাক খাচ্ছে জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন। বিনা চিকিৎসায় ভুগছেন আম জনতা। সরকারি হাসপাতাল একেবারে সাধারণ গরিব মানুষ চিকিৎসা করাতে যান, যাঁদের সামর্থ্য নেই বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়ার। তাঁরা কার্যত চিকিৎসার অভাবে ভুগছেন।
রোগীর স্বার্থের কথা না-ভেবে স্রেফ আন্দোলনের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে? প্রশ্ন উঠেছে, রাজনীতির কারবারিরা কি ভিতরে ভিতরে আন্দোলনের দখল নিয়ে ফেলেছে? সরকার বদলের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে চাওয়ার বাধ্যবাধকতা থেকেই কি কর্মবিরতির পথে এগোনো? মেধাবীদের ক্রমাগত ‘ব্রেন ওয়াশ’ চলছে? জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি রবিবার ১৬ দিন পার করল। কর্মবিরতি উঠে যাওয়ার কোনও খবর নেই। আজ, বেলা ৩টে নাগাদ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে গণ কনভেনশনের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। প্রতিদিনের জিবি মিটিং তো আছেই। একাংশ বলছেন, আন্দোলনের পাশাপাশি কাজে যোগ দেওয়া উচিত। অপর অংশের বক্তব্য, আমরণ অনশন শুরু করলে টনক নড়বে সরকারের। কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে রয়েছে একাংশ। আন্দোলনকারীদের মুখপাত্র ডাঃ অনিকেত মাহাত বলেছেন, তাঁরা ৪৮ ঘণ্টা সময় চেয়েছিলেন। আরও ২৪ ঘণ্টা হাতে আছে। ঠিক একটা কিছু ফয়সালা হবে।
আন্দোলনের কেন্দ্র আরজি করে রবিবার ইমার্জেন্সির মাধ্যমে ভর্তি হয়েছেন মাত্র ১৫ জন। ভর্তি আছেন ১৫০ রোগী। খালি পড়ে ১৮৫০টি বেড। রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতে রোগী ভোগান্তি অব্যাহত। ওষুধ লিখে ছেড়ে দিচ্ছেন ডাক্তাররা। রোগীদের প্রশ্ন, ‘আর কতদিন এসব সহ্য করতে হবে?’ কর্মবিরতির জেরে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন হার্টের রোগীরা। ভর্তি হতে পারছেন না রোগীরা। বহু রোগীর জীবন সঙ্কটে পড়ছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে হার্ট অ্যাটাক ও ইমার্জেন্সি পরিস্থিতির রোগীদের এখন কলকাতায় আনছেন না গ্রামাঞ্চল ও শহরতলির মানুষজন। বাইপাস লাগোয়া বিভিন্ন বড় কর্পোরেট হাসপাতাল জানিয়েছে, তাদের কিন্তু রোগী বাড়েনি। গত ১৫ দিনে প্রাইভেট চেম্বারে অর্ধেকের বেশি রোগী কমে গিয়েছে বলে দাবি হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের।
এত রোগী গেলেন কোথায়? বেশিরভাগই কলকাতা ও জেলা সদর-শহরতলির ছোট-মাঝারি নার্সিংহোমে ছুটছেন বলে মনে করা হচ্ছে। রাজ্যের ১৭০০ ছোট ও মাঝারি নার্সিংহোমের সংগঠন প্রোগ্রেসিভ নার্সিংহোম অ্যান্ড হসপিটাল অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শেখ আলহাজউদ্দিন বলেন, অন্যান্য রোগীর সংখ্যা না বাড়লেও হার্টের ইমার্জেন্সি অপারেশন প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে তাঁদের সংগঠনভুক্ত নার্সিংহোমগুলিতে। স্টেন্টিং, পেসমেকার, ভালভ অপারেশন বেড়ে গিয়েছে দুই ২৪ পরগনা, বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি, নদীয়া জেলার ছোট ও মাঝারি নার্সিংহোমে। কিছু মানুষ স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের সুবিধা পাচ্ছেন। অনেকে সর্বস্ব দিয়ে চিকিৎসা করিয়ে পথে বসছেন।