যে জুনিয়র ডাক্তাররা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করেছিলেন, তাঁরাই এখন বলছেন ‘অভিভাবক’, কেন?
নিউজ ডেস্ক, দৃষ্টিভঙ্গি: নবান্ন ও জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে এই মুহূর্তে তীব্র স্নায়ুর লড়াই চলছে। বৃহস্পতিবার সন্ধেয় দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল তা শুধু একটা কারণেই ভেস্তে যায়। তা হল, জুনিয়র ডাক্তাররা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের বৈঠক লাইভ স্ট্রিমিং করাতে চান। সরকারের তাতে ঘোর আপত্তি রয়েছে।
বৃহস্পতিবার নবান্নে আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট অপেক্ষা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা বৈঠকে যোগ না দেওয়ায় তা ভেস্তে যায়। এরপরই এ ব্যাপারে সাংবাদিক বৈঠক থেকে মমতা বলেন, ‘‘তিন দিনেও সমাধান করতে পারলাম না। বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চাইছি। যাঁরা নবান্নের সামনে এসেও বৈঠকে এলেন না, তাঁদের আমি ক্ষমা করলাম। আমাকে অনেক অসম্মান করা হয়েছে। আমার সরকারকে অসম্মান করা হয়েছে। অনেক ভুল বোঝাবুঝি, কুৎসা হয়েছে। সাধারণ মানুষ রং বোঝেনি। আমি পদত্যাগ করতে রাজি আছি। কিন্তু ওরা বিচার চায় না। চেয়ার চায়। আশা করি মানুষ সেটা বুঝবেন।’’
এরপরই আন্দোলনরত ডাক্তাররা সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী ‘অভিভাবক’ হিসেবে উল্লেখ করেন। তার পরেই অনেকের প্রশ্ন আন্দোলনরত ডাক্তারদের এই ভোলবদল কেন? তারা মনে করছেন, মুখ্যমন্ত্রীকে ‘অভিভাবক’ হিসাবে তুলে ধরে কার্যত তাঁকে ঢাল বানাতে চাইছেন আন্দোলনরত চিকিৎসকরা। আরজি কর কাণ্ডে সুপ্রিম কোর্ট স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা দায়ের করে শুনানি শুরু করেছে। সেই মামলাতেই চিকিৎসকদের কর্মবিরতির প্রসঙ্গ উঠেছিল। সেখানেই সুপ্রিম কোর্ট গত মঙ্গলবার বিকেল ৫টা অবধি ডেডলাইন দিয়ে দিয়েছিল আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কাজে যোগ দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেই নির্দেশ তাঁরা মানেননি। যার জেরে এখন তাঁদের গায়ে সুপ্রিম কোর্ট অবমাননার দাগ লেগে গিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া যে কোনও রকমের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে, যা থেকে তাঁদের কেউ বাঁচাতে পারবে না। ১৯৭১ সালের আদালত অবমাননা আইন অনুযায়ী আদালত অবমাননায় সাজা সর্বোচ্চ ৬ মাসের কারাদণ্ড, জরিমানা, অথবা সাজা ও জরিমানা দুটোই।
ফলে আন্দোলনরত চিকিৎসকরা বুঝতে পেরেছেন এই মুহূর্তে তাঁদের বাঁচাতে পারেন মুখ্যমন্ত্রীই। বাম-বিজেপি অথবা মাও-নকশালদের পরামর্শ তাঁদের আরও বিপদে ফেলে দিচ্ছে। ফলে তাঁরা এই মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রীকেই ‘অভিভাবক’ বলছেন।