বুলবুল ছবিতে হিন্দুত্বের অপমান? জেনে নিন আসল সত্য
সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায় অনুষ্কা শর্মা প্রযোজিত ছবি ‘বুলবুল’। সেই ছবি ঘিরে বিতর্ক দানা বেঁধেছে একটি জনপ্রিয় বাংলা লোকগীতির কারণে। সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু হিন্দুত্ববাদী এই গান শুনে বলছেন এতে নাকি হিন্দু ধর্মের অপমান হয়েছে। ডাক উঠেছে বুলবুল তথা নেটফ্লিক্স বয়কট করারও।
জনপ্রিয় বাউল গান ‘কলঙ্কিনী রাধা’ গানটি নিয়েই যত সমস্যা। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, ওই গানে হিন্দুদের ভগবান কৃষ্ণকে ‘কানু হারামজাদা’ এবং রাধাকে ‘কলঙ্কিনী’ বলে হিন্দুত্বের উপর আক্রমণ করা হয়েছে। জনপ্রিয় ইউটিউবার হিন্দুস্তানি ভাউ টুইট করে দাবি করেন, “বুলবুলে যেভাবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও রাধাকে নোংরা ভাষায় অপমানিত করা হয়েছে, তার জন্য সরকার কি আনুষ্কা শর্মাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করবে?”
তথ্য যাচাই
হিন্দুস্তানি ভাউ এবং অন্যান্য হিন্দুত্ববাদীদের দাবি ভিত্তিহীন। অনেকে দাবি করেছেন এই গানটি রচনা করেছেন শাহ আব্দুল করিম। কিন্তু তথ্য বলছে এই গানের রচয়িতা রাধারমণ দত্ত। আব্দুল করিম গানটি গেয়েছেন মাত্র।
“কানু হারামজাদা” বা “কলঙ্কিনী রাধা” বলে এখানে কাউকে অপমানিত করা হচ্ছে না, বরং শ্রী কৃষ্ণের প্রেম লীলার গুণকীর্তন করতে গিয়ে খোদ রাধাই নিজেকে কলঙ্কিত বলে উল্লেখ করেন। এই স্তবকের মানে কখনোই কৃষ্ণকে অপমান করা নয়!
বৈষ্ণব সাহিত্যের রাধা কৃষ্ণ প্রেম সাহিত্য রসিকদের আজীবনের আস্বাদনের বস্তু। হিন্দুদের সহজাত উদার ধর্ম ভাবনা ও সাহিত্য রস নেবার সংস্কৃতি ছিলো বলেই ভক্তি আন্দোলনের সময় এই রকম লোকগীতি রচনা করতে পেরেছিলেন সেই সময়কার শিল্পীরা।
কবি জয়দেবের রাধা কৃষ্ণ নিয়ে লেখা গানগুলি ছিলো পুরো মাত্রায় যৌনতাড়িত। জয়দেবের গীতগোবিন্দের এইসব রচনা লক্ষণসেনের রাজসভায় অভিনিত হয়েছিল। আপনারা কি লক্ষণসেনের চেয়ে বড় হিন্দু? জয়দেব ভাবে প্রেমে সোহাগে বিরহে রাধা কৃষ্ণকে কখনো লম্পট, কখনো লাজহীন নারী বলে অভিহিত করেছেন।
চোদ্দ-পনেরো শতকে মিথিলা ও বাংলায় রাধা কৃষ্ণকে নিয়ে এরকম পদাবলি রাজ-আনুকূল্যে রচিত হয়েছে। তখনকার রাজারা কি যথেষ্ট হিন্দু ছিলেন না? প্রাচীন মিথিলা, বাংলা, আসাম, গুজরাট, পাঞ্জাব, রাজস্থানের রাজসভায় শ্রীকৃষ্ণের ও রাধারানীকে নিয়ে এমন রসের সাহিত্য চর্চা হত।