দেশ বিভাগে ফিরে যান

শুধু ২০১৯ সালেই ৪২৪৮০ কৃষক-দিনমজুরের আত্মহত্যা! বিড়ম্বনায় মোদী সরকার

September 4, 2020 | 2 min read

করোনা পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা প্রায় তলানিতে। আর এই পরিস্থিতি কে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন বলেছেন, ‘অ্যাক্ট অফ গড’। কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী যাই বলুন না কেন, ২০১৯ সালে যখন করোনার কোনও থাবাই ছিলই না, তখনও দেশের কৃষক ও দিনমজুরদের দুরাবস্থা আরও একেবার কেন্দ্রের দিশাহীনতারই প্রমাণ দিচ্ছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (NCRB)-র পরিসংখ্যান বলছেন, শুধুমাত্র ২০১৯ সালেই ৪২৪৮০ জন কৃষক ও দিনমজুর আত্মহত্যা করেছে। ২০১৮ সালের তুলনায় আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে ৬ শতাংশ। তবে, ২০১৮ সালের তুলনায় গত বছরে কৃষকদের আত্মহত্যার ঘটনা কিছুটা কম। যদিও দিনমজুরের আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে ৮ শতাংশ।

এনসিআরবি (NCRB)-র তথ্য বলছে, ২০১৮ সালে ১০ হাজার ৩৫৭ কৃষক আত্মহত্যা করেছিলেন। সেখানে গত বছর ১০ হাজার ২৮১ জন কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। দুবছরের মধ্যে তফাৎ সামান্যই। অপরদিকে, ২০১৮ সালে ৩০,১৩২ দিন মজুর আত্মহত্যা করেছিলেন। সেখানে ২০১৯-এ সংখ্যাটা বেড়ে হয়েছে ৩২,৫৫৯।

এখানেই শেষ নয়, পরিসংখ্যান বলছে, গত এক বছরে দেশের মোট আত্মহত্যাকারীর ৭.৪ শতাংশই দেশের কৃষকরা। জানা গিয়েছে, কৃষি ক্ষেত্রে মোট আত্মঘাতীর মধ্যে চাষির সংখ্যা ৫৯৫৭ জন। ৪৩২৪ জন হলেন খেতমজুর। আর আত্মহত্যার ক্ষেত্রে মহিলাদের থেকে অনেক এগিয়ে রয়েছেন পুরুষদের সংখ্যা। ২০১৯ সালে ৫৫৬৩ পুরুষ কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। মহিলা কৃষকের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা হল ৩৯৪ জন। অপরদিকে, খেতমজুরদের মধ্যেও পুরুষ ও মহিলাদের মধ্যে যথেষ্টই ফারাক রয়েছে। খেতমজুরদের মধ্যে ৩,৭৪৯ জন পুরুষ আত্মহত্যা করেছেন আর ৫৭৫ জন মহিলা। কৃষি ক্ষেত্রে আত্মহত্যার নিরিখে শীর্ষ রয়েছে মহারাষ্ট্র, কর্নাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ ও তেলঙ্গানা। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, পশ্চিমবঙ্গে কোনো কৃষক আত্মহত্যা করেননি বলেই উল্লেখ করেছে এনসিআরবি।

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট আত্মহত্যার সংখ্যাটাও রীতিমতো আশঙ্কার। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৮ সালের তুলনায় ২০১৯ সালে আত্মহত্যার ঘটনাও বেড়েছে অনেক। ২০১৮ সালে দেশে আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছিল ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৫১৬। ২০১৯ সালে সেই সংখ্যাটাই বেড়ে হয়েছে ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ১২৩ জন। আর এক্ষেত্রে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যার ঘটনাই সর্বাধিক। আত্মহত্যাকারীদের মধ্যে ৫৩.৬ শতাংশ মানুষ গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছে ২০১৯ সালে। বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছেন ২৫.৮ শতাংশ মানুষ। জলে ডুবে আত্মহত্যা করেছেন ৫.২ শতাংশ মানুষ।

কেন এত বিপুল পরিমাণ আত্মহত্যা? আত্মহত্যার কারণ হিসেবে সবচেয়ে বেশি করে উঠে এসেছে পারিবারিক অশান্তির কথা। মোট আত্মহত্যার ৩২.৪ শতাংশ ঘটেছে পারিবারিক অশান্তির কারণে। দাম্পত্য জীবনের অশান্তির কারণে আত্মঘাতী হয়েছেন ৫.৫ শতাংশ মানুষ। রোগের যন্ত্রণা থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে আত্মঘাতী হয়েছেন ১৭.১ শতাংশ মানুষ।

কংগ্রেস অবশ্য চলতি বছরের হিসেব তুলে ধরে বিঁধেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সিং সুরজেওয়ালা বলেছেন, ‘ভারতে প্রতিদিন ৩৮ জন বেকার ও ১১৬ জন কৃষক আত্মহত্যা করছেন, আপনি এর মধ্যে শান্তিতে ঘুমোন কী করে?’ দেশের কৃষক, দিনমজুর ও বেকারদের আত্মহত্যার কারণ হিসেবে দেশের কোমর ভাঙা অর্থনীতিকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন অর্থনীতিবিদরাও।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#NCRB Report, #Sucide, #farmers

আরো দেখুন