করোনা আতঙ্কে শিকেয় পুজোর পর্যটন ব্যবসা
করোনা আতঙ্কই জল ঢেলেছে বেড়ানোর নেশায়। শিকেয় পুজোর পর্যটন। উৎসবের ভরা মরশুমে যেখানে প্রতিবছর ইন্ডিয়ান রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন (আইআরসিটিসি) লাভের কড়ি ঘরে তোলে, এবার সেখানে ফুটো কলসি। পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখাচ্ছে না আমবাঙালি। অন্যান্য বছর পুজোর মরশুমে ভিনরাজ্য বা বিদেশ ভ্রমণের জন্য দিস্তা দিস্তা আবেদন জমা পড়ে আইআরসিটিসির দপ্তরে। তাদের সারা বছরের ব্যবসার সিংহভাগই উঠে আসে পুজোর বুকিং থেকে। কিন্তু এবার করোনা আবহে কার্যত মাছি তাড়াচ্ছে রেলের এই পর্যটন সংস্থা। ভিনরাজ্য কিংবা বিদেশ ভ্রমণের বুকিং নেই। এমনকী তারা বাংলার পরিচিত পর্যটন কেন্দ্র নিয়ে নয়া প্যাকেজ তৈরি করলেও তেমন সাড়া মিলছে না। পর্যটন ব্যবসায় মহামন্দার কথা স্বীকার করে নিয়ে সংস্থার পূর্বাঞ্চলীয় গ্রুপ জেনারেল ম্যানেজার দেবাশিস চন্দ্র বলেন, মানুষ এখনও করোনা আতঙ্ক থেকে মুক্ত হতে পারেনি। তাই ভ্রমণপিপাসু বাঙালি পুজোয় ঘুরতে যাওয়া থেকে পিছিয়ে এসেছে। উল্লেখ্য, গতবছরও এই সময় ২৫টিরও বেশি গ্রুপ আইআরসিটিসির প্যাকেজে ভ্রমণ করেছিল। এবার সেসবের বালাই নেই। আইআরসিটিসিও কোনও গ্রুপ বা বাল্ক ট্যুরিজমের আয়োজন করছে না।
প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গে সংক্রমণের হার ক্রমে বেড়ে চলেছে। সম্প্রতি কেরলের সর্ববৃহৎ উৎসব ওনামে সেই রাজ্যের মানুষ সর্বাত্মক অংশ নিয়েছিলেন। তারপর থেকেই দক্ষিণ ভারতের এই রাজ্যে করোনা গ্রাফ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। এই বিষয়টি ভাবাচ্ছে আমবাঙালিকে। এই আতঙ্ক থেকেই পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করেছেন অনেকেই। বরং বাড়িতে সুরক্ষিত ঘেরাটোপে থেকেই উৎসব পালনের দিকে ঝুঁকছেন রাজ্যবাসী। পর্যটকদের এই মনোভাবই কপালে ভাঁজ ফেলেছে আইআরসিটিসির কর্তাদের। দেবাশিসবাবু বলেন, যাবতীয় করোনা বিধি মেনেই আমরা পুজোয় স্বামী-স্ত্রী-বাচ্চার জন্য ছোট প্যাকেজের ব্যবস্থা করেছি। দু’-তিনদিনের জন্য দীঘা, মন্দারমণি, শান্তিনিকেতন সহ কয়েকটি জায়গা বাছা হয়েছে। পর্যটকদের বাড়তি আকর্ষণের জন্য হোম স্টে, অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজমকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান দেবাশিসবাবু। সূত্রের দাবি, করোনা স্বাস্থ্যবিধি সংক্রান্ত আশ্বাস কিংবা বাড়তি সুবিধা ঘোষণার পরেও বুকিংয়ের চিত্র বদলায়নি।
এদিকে, করোনার জেরে সিকিম ভ্রমণ মহার্ঘ হয়ে উঠেছে। জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে কোনও গাড়ি গেলে ঢুকতে দিচ্ছে না সিকিম সরকার। সিকিম সীমান্তে গিয়ে করোনা টেস্ট করতে হচ্ছে পর্যটকদের। সেখানে সংক্রমণ ধরা পড়লে সিকিমের ঢোকার দরজা বন্ধ। শুধু তাই নয়, করোনা টেস্টে পাশ করলেও পশ্চিমবঙ্গের গাড়ি ঢোকা নিয়েও আপত্তি রয়েছে সিকিমের। ফলে সেখানে ঢুকতে গেলে সিকিমের গাড়ি ভাড়া করা ছাড়া বিকল্প নেই। সব মিলিয়ে করোনা পরীক্ষা এবং গাড়ি ইস্যুতে বাড়তি সময় এবং টাকা যাচ্ছে। যার জেরে সিকিম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেকেই। সব মিলিয়ে করোনার সৌজন্যে পুজো পর্যটনের দফারফা হয়ে গিয়েছে।