প্রযুক্তি বিভাগে ফিরে যান

বছর শেষে আসছে উইন্ডোজ ১১

June 27, 2021 | 3 min read

বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় টেক কোম্পানি Microsoft পার্সোনাল কম্পিউটার ইউজারদের Windows অপারেটিং সিস্টেমে বড়সড় পরিবর্তন করল। Windows 10 লঞ্চ হওয়ার প্রায় ছয় বছর পর Windows 11 নিয়ে হাজির হল মাইক্রোসফ্ট। 24 জুন এই আপগ্রেডেড অপারেটিং সিস্টেম (OS) লঞ্চ করা হল কোম্পানির তরফে। পরবর্তী প্রজন্মের এই অপারেটিং সিস্টেম ইতিমধ্যেই চলে এসেছে স্টার্ট মেনু সেন্টারে। Windows 11-এর ডিজাইনে বড়সড় পরিবর্তন নিয়ে আসা হয়েছে। এর মধ্যে একদিকে যেমন উইজেটসও রয়েছে, আর একদিকে ঠিক তেমনই আবার MacOS-এর মতো নীচের দিকে ডার্ক বার দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে লুকের দিক থেকেও নজরকাড়া হয়েছে উইন্ডোজ ১১।

কোম্পানির তরফে দাবি করা হচ্ছে যে, উইন্ডোজ ১১ ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ অর্থাৎ পার্সোনাল কম্পিউটারের জগৎে আমূল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিতে চলেছে। আর সেই কারণেই এদিন সান ভ্যালি থেকে Windows 11 লঞ্চ করার সময় Microsoft সিইও সত্য নাদেলা বলেন, ‘উইন্ডোজ ১১ নিয়ে এসে আপনাদের সামনে আমরা যা করে দেখালান, তাতে আমি খুবই আনন্দিত। গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে আমাদের এই পদক্ষেপ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।’ সমস্ত Windows 10 ব্যবহারকারীরা বিনামূল্যেই নিজেকে Windows 11-এ আপগ্রেড করিয়ে নিয়ে পারবেন। চলতি বছরের শেষ (বড়দিনের ছুটি) থেকেই গ্রাহকেরা ব্যবহার করতে পারবেন এই নতুন OS। যদিও, সামনের সপ্তাহ থেকেই টেস্টের জন্য উপলব্ধ হবে Windows 11। মাইক্রোসফ্টের এই আপগ্রেডেড অপারেটিং সিস্টেম সম্পর্কে একাধিক তথ্য জেনে নেওয়া যাক।

এখনও পর্যন্ত এত অপারেটিং সিস্টেম নিয়ে এসেছে Microsoft। কিন্তু, তাদের সবার থেকে Windows 11-এর একপ্রকার আকাশ-পাতাল ফারাক রয়েছে। ডিজাইন থেকে শুরু করে ফিচার্স – Windows 11 অন্যান্য অপরেটিং সিস্টেমগুলির থেকে সম্পূর্ণ ভাবে আলাদা। মাইক্রোসফ্টের তরফে এদিন বলা হয়েছে যে, বছর শেষের ছুটির সময় অর্থাৎ বড়দিনের ছুটিতেই পার্সোনাল কম্পিউটার, ল্যাপটপ ট্যাবলেট – সব কিছুর জন্যই রোলআউট করা হবে উইন্ডোজ ১১। অর্থাৎ, বড়দিনের সময় থেকেই এই অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করতে পারবেন ইউজারেরা। যদিও কোম্পানির তরফে নির্দিষ্ট করে কোনও দিনের উল্লেখ করা হয়নি। আর এই অপারেটিং সিস্টেম একবার রোলআউট হয়ে গেলেই, Dell, HP, Asus, Lenovo-সহ আরও একগুচ্ছ অরিজিনাল ইক্যুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারাদের (OEM) ডিভাইসের জন্য উপলব্ধ করা হবে।

হ্যাঁ, Windows 11-এর সাহায্যে এমনই অসাধ্যসাধন হতে চলেছে। যখন আপনার ডিভাইসে উইন্ডোজ ১১ আপডেট করবেন, তখন যেমন নতুন থিম পাবেন, তেমনই আবার গ্রাফিক্সও পেয়ে যাবেন। টাস্কবারে পরিবর্তন করা হয়েছে। তাতে, আইকনকে এক্কেবারে সেন্টারে নিয়ে আসা হয়েছে। ফাইল ম্যানেজমেন্টের জন্য এই অপারেটিং সিস্টেমে নতুন ফিচার্স দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গেই আবার উইন্ডোজ হ্যালোরও লুকে পরিবর্তন করা হয়েছে। ফাইলস সরিয়ে দিয়ে স্টার্ট মেনু নিয়ে আসা হয়েছে সামনে। রিসেন্ট ফাইল নিয়ে যাওয়া হয়েছে অন্য জায়গায়। তবে, সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ফিচার্স হল, ফোনের সঙ্গে এর কানেক্টিভিটি এক্কেবারে ঢেলে সাজানো হয়েছে। সমস্ত অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ কম্পিউটার থেকেই ব্যবহার করতে পারবেন। তার ফলে, আপনার ফোনের সমস্ত কাজ আপনি Windows 11-এর সাহায্যে ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ থেকেই করতে পারবেন।

মাল্টি টাস্কিংয়ের জন্য Windows 11-এ দেওয়া হয়েছে একটি স্ন্যাপ লে-আউট। এর সাহায্যে ইউজারেরা কম্পিউটারের একটা স্ক্রিনেই যে কোনও এবং একসঙ্গে যতখুশি ডিভাইস চালাতে পারবেন। এখনও পর্যন্ত এই ফিচার আর অন্য কোনও অপারেটিং সিস্টেমে দেয়নি উইন্ডোজ। আবার, অ্যাপসের কালেকশনের জন্য স্ন্যাপগ্রুপও দেওয়া হয়েছে, যেটি টাস্কবার থেকেই অ্যাকসেস করা যাবে। এছাড়াও এই অত্যাধুনিক অপারেটিং সিস্টেমের সাহায্যে একটি কম্পিউটারকে দ্বিতীয় কোনও কম্পিউটারের সাহায্যে কানেক্ট করাও খুব সহজ হয়ে যাবে। ডার্ক ও আনডার্ক ফিচারের সাহায্যে প্রফেশনাল ইউজারেরা হাই-কোয়ালিটি গ্রাফিক্স উপভোগ করতে পারবেন। সেই সঙ্গেই আবার উইন্ডোজ ১১-তে এজ ব্রাউজারও বদলে দেওয়া হয়েছে। সিঙ্গল ক্লিকেই মাল্টি টাস্কিং করতে পারবেন গ্রাহকেরা। পাশাপাশিই আবার অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেমের মতোই Windows 11 চালিত যে কোনও কম্পিউটারের স্ক্রিনে নিজের পছন্দসই ওয়ালপেপার সেট করে রাখতে পারবেন।

Windows 11-এ দেওয়া Microsoft Team-এর ইন্টিগ্রেশনের সাহায্যে ইউজারেরা যে কোনও ডিভাইসের সঙ্গে ভার্চুয়ালি জুড়ে বাক্যালাপ করতে পারবেন। তার জন্য যে কোনও প্ল্যাটফর্ম থেকে Windows 11-এর সাহায্যে টিমস ব্যবহার করতে হবে। এতে দেওয়া উইজেটস ফিচারগুলি পার্সোনালাইজডও করা যাবে। অফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহার করা হয়েছে এতে। আবহাওয়া থেকে শুরু করে আরও একাধিক জরুরি উইজেটস দেখতে পাবেন গ্রাহকেরা। উইন্ডোজ ১১-এ জেস্চার ও স্টক ফিচার আরও উন্নত করা হয়েছে। আর তার ফলেই কিবোর্ডে হাত না দিয়েও আপনি ব্যবহার করতে পারবেন কম্পিউটার। হ্যাপটিক সাপোর্ট রয়েছে, যার দ্বারা ইউজারেরা সরাসরি স্টাইলস থেকে কাজ করতে পারবেন। এছাড়াও, থাকছে ভয়েস টাইপিং। অর্থাৎ আপনার আওয়াজ শুনেই টাইপ করতে শুরু করে দেবে কম্পিউটার। শুধু তাই নয়। Windows 11-এ সিনেমা এবং ওয়েব সিরিজও থাকবে। ভাড়া নিয়ে অথবা সরাসরি কিনেই সিনেমা বা সিরিজ দেখতে পারবেন গ্রাহকেরা।

Microsoft-এর তরফে এদিন বলা হয় যে, গেমস খেলতে যাঁরা পছন্দ করেন, তাঁদের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে এই অপারেটিং সিস্টেম। Windows 11-এই গেমারেরা সেরার সেরা গেমিং অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারবেন। কোম্পানির তরফে আরও দাবি করা হয়েছে যে, এই উইন্ডোজ ১১-ই হচ্ছে গেমিংয়ের ভবিষ্যৎ। এতে Auto HDR ফিচার দেওয়া হয়েছে, যার সাহায্যে গেম খেলার সময় অটোমেটিক্যালি লাইট আপডেট হবে, যাতে ভিজ়িবিলিটি আরও পরিণত হয়। তার জন্য প্লেয়ার এবং গেম ডেভেলপারদের কিছুই করতে হবে না। Windows 11-এ ডায়রেক্ট স্টোরেজ ফিচার থাকার ফলে গেম খুব দ্রুততার সঙ্গে লোড হবে। এছাড়াও, এতে Xbox অ্যাপের সাহায্যে গেম পাস সাবস্ক্রিপশনও দেওয়া হয়েছে। অন্য দিকে আবার গেম পাস লাইব্রেরির জন্য ইউজারদের বেশি ঝক্কি পোহাতে হবে না। সেই সঙ্গেই আবার ইউজারেরা গেমিং ভ্যারাইটিও পেয়ে যাবেন এখানে। পাশাপাশিই আবার উইন্ডোজ ১১-তে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন গেম আপলোডও করা হবে।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Microsoft, #technology

আরো দেখুন