দক্ষিণবঙ্গ বিভাগে ফিরে যান

কৃষ্ণনগরে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ স্থানীয়দের, যানজটে আটকে মৃত্যু শিশুর

November 10, 2021 | 3 min read

জাতীয় সড়কের উপর দাঁড়িয়ে সাইরেন বাজিয়ে চলেছে অ্যাম্বুল্যান্স। কিন্তু, সে আওয়াজ কারও কানে ঢুকছে না। চলছে অবরোধ। উৎসবে আনন্দ করতে দেওয়ার দাবিতে টায়ার জ্বালিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ। অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতরে অক্সিজেনের নল নাকে নিয়ে শুয়ে বছর সাতেকের নিথর শিশু। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন বাবা, মা।

কৃষ্ণনগরের অবরোধে আটকে পড়ে অ্যাম্বুল্যান্সের ভিতরে মৃত্যু হল এক শিশুর। মঙ্গলবার রাত ১১ টা থেকে বুধবার ভোর সাড়ে তিনটে পর্যন্ত ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জগদ্ধাত্রী পুজোয় আতিমারিকালীন বিধিনিষেধ শিথিল করতে হবে এই দাবিতেই জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছিলেন কৃষ্ণনগরের বাসিন্দারা। তারই ফলে মালদা থেকে কলকাতা যাওয়ার পথে মৃত্যু হল অসুস্থ ওই শিশুর, দাবি পরিবারের। ঘটনার পর পাঁচজন অবরোধকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আর তারপরেই প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টার অবরোধ ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বুধবার সকাল থেকে অবরোধ না থাকলেও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে তৈরি হয়েছে প্রবল যানজট।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদা জেলার মোথাবাড়ি এলাকার বাসিন্দা সাকিবুল শেখ (৭) গত কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ। মঙ্গলবার রাতে চিকিৎসার জন্য তাঁকে নিয়ে কলকাতার SSKM-র দিকে রওনা দিয়েছিলেন পরিবারের লোকজন। কৃষ্ণনগরের কাছে এসে অবরোধে আটকে পড়েন তাঁরা। জাতীয় সড়কে মাঝরাতে গাড়ি ও ট্রাকের বিপুল ভিড় সরিয়ে এগিয়ে যেতে পারেনি অ্যাম্বুল্যান্স। প্রায় চার ঘণ্টা অবরোধে আটকে থেকে রাস্তাতেই মৃত্যু হয় সাকিবুলের। এরপরেই কৃষ্ণনগর কোতোয়ালি থানার তরফে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলায় পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়। উঠে যায় বিক্ষোভ।

কোভিড পরিস্থিতির কারণে কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় এ বছরও ঘট বিসর্জন এবং বাহকের কাঁধে করে প্রতিমা বিসর্জনের রীতি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল প্রশাসন। শহরে ঐতিহ্যবাহী জগদ্ধাত্রী পুজোর সমন্বয় সভা থেকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছিল এ প্রসঙ্গে। যদিও পুজো উদ্যোক্তারা এ বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন তা গত রবিবার সমন্বয় সভা থেকে জানাতে পারেননি। এদিকে হাতে আর মাত্র দু’ দিন। তারপরে কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্যবাহী জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু হবে। প্রশাসনের নির্দেশের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার রাতে কৃষ্ণনগর পুরসভার সামনে ধরনা বসেন এলাকার বাসিন্দারা। ফেস্টুন-প্ল্যাকার্ড হাতে অসংখ্য যুবক-যুবতীরা প্রতিবাদ কর্মসূচিতে। তাঁদের দাবি ছিল, ‘নির্বাচনের সময় কোনও রকম বিধিনিষেধ নেই অথচ পুজোর বেলায় কেন এত নিয়ম?’

প্রথমে কৃষ্ণনগর পৌরসভার সামনে ধরনা শুরু হলেও পরে বিক্ষোভের আঁচ পৌঁছয় পার্শ্ববর্তী কৃষ্ণনগর কোতোয়ালি থানার সামনে। সেখান থেকে জাতীয় সড়কে। ভাঙচুর, আগুন সবই চলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বিক্ষোভকারীদের দাবি, কৃষ্ণনগরের ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে ঘট বিসর্জন এবং বেহাড়া সমন্বয়ে সাঙে করে বিসর্জন প্রথার অনুমতি দিতে হবে প্রশাসনকে। কোনও রকম রাজনৈতিক ব্যানার ছাড়া শুরু হয়েছিল এই বিক্ষোভ।

কৃষ্ণনগরের চিরকালীন প্রথা অনুযায়ী, বিসর্জনের আগে প্রতিমাকে কাঁধে করে কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। রাজবাড়ি প্রদক্ষিণ করে তবেই জলঙ্গির কদমতলা ঘাটে প্রতিমা নিয়ে যায় বেহারা। ৩০-৩৫টি বড় পুজো এই রীতি এখনও মানে। এছাড়াও সকাল ১০টা থেকে দুপুর তিনটে অবধি ঘট বিসর্জন হয়। তবে করোনাকালে ঐতিহ্যবাহী এই রীতি বন্ধ করেছে প্রশাসন। গত বছরও ওই বিধিনিষেধ বহাল ছিল। তবে এ বছর এই রীতি মানতে নারাজ এলাকাবাসী। আর তাই প্রতিবাদে সরব তাঁরা। কিছুদিন আগে পর্যন্ত রাত জেগে ঠাকুর দেখার ক্ষেত্রেও বাধা ছিল। মঙ্গলবার নবান্নের তরফে নির্দেশিকা জারি করে সেই নৈশ কার্ফু সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী ১২ এবং ১৩ নভেম্বর (অষ্টমী ও নবমী) হুগলি এবং নদিয়াতে রাত্রিকালীন বিধিনিষেধ শিথিল করে দেওয়ার ঘোষণা করেছে নবান্ন। বলা হয়েছে, পুজোর দিনে রাত্রি ১১টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত যান চলাচল করতে পারবে।

কিন্তু, এদিনের বিক্ষোভ অবরোধ আটকে পড়ে অ্যাম্বুল্যান্সে শিশু মৃত্যুর ঘটনার নিন্দাও করেছেন অনেকে। এর আগে এই কৃষ্ণনগরেই BJP-র জনসভায় আটকে পড়েছিল অ্যাম্বুল্যান্স। তবে বিপদ এড়ানো গিয়েছিল সেই বার। বিধানসভা ভোটের আগে গত জানুয়ারি মাসে সাংগঠনিক সভা করতে এসেছিলেন দলের তৎকালীন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কয়েক হাজার কর্মী সমর্থক রাস্তায় ভিড় করেছিলেন। সে সময় একটি অ্যাম্বুল্যান্স ওই পথ দিয়ে যেতে চাইলে যেতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।মঞ্চ থেকে সে দিন দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, ‘এখান দিয়ে যাওয়া যাবে না। ঘুরিয়ে অন্য দিত দিয়ে নিয়ে যান।’ এ সব সভা বাঞ্চালের চক্রান্ত বলেও দাবি করেছিলেন তিনি। তা নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল রাজ্য রাজনীতিতে। BJP-র নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি আশুতোষ পাল পরে দাবি করেছিলেন, ভিতরে কোনও রোগী ছিলেন না। খালি অ্যাম্বুল্যান্স বলেই ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

#Jagadhatri Puja, #Incident, #krishnanagar

আরো দেখুন