আবারও ইউরোপীয় দলের কাছে ব্রাজিলের স্বপ্নভঙ্গ, সেমিফাইনালে গেল ক্রোয়েশিয়া
বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিল ব্রাজিল। ইউরোপের ‘ভূত’ তাড়াতে পারল না নেইমাররা। লুকা মদ্রিচের ক্রোয়েশিয়ার কাছে টাইব্রেকারে ৪-২ ব্যবধানে পরাজিত হয়ে থেমে গেল নেইমারদের সাম্বা নাচ। টানা পঞ্চমবারের মতো নক আউট পর্বে ইউরোপের কোনো দলের বিপক্ষে হেরে বিদায় নিল ব্রাজিল।
এদিন কার্যত একাই ব্রাজিলকে আটকে দিলেন ক্রোয়েশিয়ার গোলকিপার ডোমিনিক লিভাকোভিচ। একের পর এক আক্রমণ ঠেকিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। নেইমার, ভিনিসিউস জুনিয়রদের সামনে তিনি যেন আজ প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন।
শুক্রবার রাতে কাতারের আল রায়ানের এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল ও ক্রোয়েশিয়া। খেলার প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য ভাবে শেষ হয়।
বল দখলে একটু এগিয়ে ছিল ব্রাজিল, সুযোগ তৈরি করা ও গোলের জন্য শট নেয়ায়ও। তবে খুব একটা পিছিয়ে ছিল না সমানে-সমানে লড়াই করা ক্রোয়েশিয়া। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে জমে ওঠা ম্যাচের প্রথমার্ধে জালের দেখা পায়নি কোনো দল।
প্রথমার্ধে বার দুয়েক নিজেদের ঝলক দেখান নেইমার, ভিনিসিউস জুনিয়ররা। তবে গোলের জন্য তা যথেষ্ট ছিল না। পঞ্চম মিনিটে গোলের জন্য প্রথম শট নেয় ব্রাজিল। ভিনিসিউস জুনিয়রের শট সহজেই ঠেকান ক্রোয়াট গোলরক্ষক দমিনিক লিভাকভিচ।
আট মিনিট পর নিজেদের প্রথম ভালো সুযোগ পায় ক্রোয়েশিয়া। বল পায়ে নিজেদের অর্ধ থেকে প্রায় ডি-বক্স পর্যন্ত চলে যান ইয়োসিপ ইউরানোভিচ। তার বল পেয়ে ক্রস করেন মারিও পাসালিচ। বক্সে ইউরারোভিচের ডামির পর দারুণ জায়গায় বল পেয়ে যান ইভান পেরিসিচ। কিন্তু তিনি শট রাখতে পারেননি লক্ষ্যে।
২০তম মিনিটে পেনাল্টি স্পটের কাছে ভিনিসিউসের শট ব্লক করেন বোর্না সোসা। কয়েক সেকেন্ড পর গোলরক্ষক৩০তম মিনিটে পেরিসিচের দূরপাল্লার শট যায় ক্রসবারের অনেক উপর দিয়ে। ৪২তম মিনিটে বিপজ্জনক জায়গায় ফ্রি কিক পায় ব্রাজিল। কিন্তু হতাশ করেন নেইমার।
দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় পুরোটা সময় খেলা হলো ক্রোয়েশিয়ার অর্ধে। আক্রমণের ঝাপটায় একের পর এক সুযোগ তৈরি করল ব্রাজিল।দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে ক্রোয়েশিয়াকে চেপে ধরার চেষ্টা করে ব্রাজিল। ৪৮তম মিনিটে দারুণ একটি সুযোগও পায় তারা। তবে পেনাল্ট স্পটের কাছ থেকে নেইমারের শট ঠেকান ইয়োস্কো গাভারদিওল।
এই আক্রমণের এক পর্যায়ে ইউরানোভিচের হাতে বল লাগে। সম্ভাব্য পেনাল্টি নিয়ে ভিএআরের সাহায্য নেন রেফারি। তবে সেই হ্যান্ডবল দুর্ঘটনাবশত বলে মেলেনি পেনাল্টি।
৫৫তম মিনিটে আবার সুযোগ পান নেইমার। রিশার্লিসনের কাছ থেকে বল পেয়ে বাঁ পায়ের শট নেন পিএসজি ফরোয়ার্ড। যতটা জোরে মারতে চেয়েছিলেন, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলায় ততটা পারেননি। কাছের পোস্টে তৎপর লিভাকভিচ ফেরান সহজেই।
৬৬তম মিনিটে লুকাস পাকেতার অবিশ্বাস্য ব্যর্থতায় ভাঙেনি ‘ডেডলক।’ ডি বক্সে আলগা পেয়ে যান এই মিডফিল্ডার। সামনে ছিলেন কেবল গোলরক্ষক কিন্তু তাকে পার করতে পারেননি পাকেতা। বেঁচে যায় ক্রোয়েশিয়া।
১০ মিনিট পর এগিয়ে গিয়ে নেইমারের শট কর্নারের বিনিময়ে ঠেকান গোলরক্ষক। ৮০তম মিনিটে ডি বক্সে বিপজ্জনক জায়গায় বল পেয়ে গোলরক্ষক বরাবর শট নিয়ে হতাশ করেন পাকেতা।
দু’দলই গোলের মুখ খুলতে ব্যর্থ হওয়ায় ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।
মাঝমাঠ থেকে খেলা শুরু করেছিলেন নেইমারই। প্রথমে পাস খেলেন পেদ্রোর সঙ্গে। সেখান থেকে নেইমার বল দেন পাকুয়েতাকে। পাকুয়েতার থেকে পাস পেয়ে গোলকিপার লিভাকোভিচকে এক টোকায় কাটিয়ে বল জালে জড়ান পিএসজি তারকা।
মনে হচ্ছিল ব্রাজিলই চলে যাচ্ছে সেমিফাইনালে। জয়ের উৎসব করার আগের মুহূর্তে ব্রাজিলকে স্তব্ধ করে দেন ব্রুনো পেটকোভিচ। ১১৭ মিনিটের মাথায় প্রতি আক্রমণে আসে ক্রোয়েশিয়া। সেখান থেকে পেরিসিচের পাসে বাঁ পায়ের শক্তিশালী শটে গোল করেন ব্রুনো পেটকোভিচ। ১-১ গোলে সমতা। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।