করোনা রোগীর চিকিৎসায় প্লাজমা বিক্রীর নামে ডার্ক নেটের প্রতারণা
ডার্ক নেটের মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত রোগীর প্লাজমা বিক্রীর নামে লোক ঠকানোর কারবারে নেমেছে প্রতারক চক্র। এমনকি বিক্রী করা হচ্ছে করোনা ভাইরাসের ভুয়ো ভ্যাকসিন। মিলছে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন-এর মতো ম্যালেরিয়ার ট্যাবলেট। দাবী করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে করোনা আক্রান্তের চিকিৎসা সম্ভব। ডার্ক নেটের একাধিক সাইট জুড়ে এই কাজ কারবার চলছে।
এই সংক্রান্ত অভিযোগ আসতে শুরু করেছে রাজ্য পুলিসের সাইবার সেলের কাছে। যা নিয়ে রীতিমতো উদ্বিগ্ন তারা। ডার্ক নেট ব্যবহার করার ফলে প্রতারকদের হদিশ পেতে রীতিমতো কালঘাম ছুটেছে অফিসারদের।
কেন ডার্ক নেটকে হাতিয়ার করেছে তারা? সাইবার সেলের অফিসারদের কথায়, ডার্ক নেটের মাধ্যমে ক্রেতা ও বিক্রেতা, দু’জনেরই পরিচয় গোপন রাখা সম্ভব। সেই কারণেই তা সাইবার অপরাধীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। আর ডার্ক নেট ইন্টারনেটের একটি আইসোলেটেড সেকশন। তাই বিশেষ ধরনের সফটওয়্যার এবং কনফিগারেশন ছাড়া এখানে প্রবেশ করা যায় না। এর সুযোগটাই নিচ্ছে অপরাধীরা। যা পুলিসের কাছে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কিভাবে ক্রেতা ধরছে সাইবার অপরাধীরা?
ফেসবুক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটকে হাতিয়ার করেছে তারা। এখান থেকেই বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব জমাচ্ছে। তারপর একটি লিঙ্ক পাঠানো হচ্ছে প্রতারকদের তরফে। তাতে ক্লিক করলে ডার্ক নেটের দুনিয়ায় প্রবেশ ঘটছে। একবার সেখানে ঢোকামাত্রই প্রতারকদের খপ্পরে পড়ছেন বিভিন্ন ব্যক্তি। ইতিমধ্যেই তাদের পাল্লায় পড়ে লক্ষ লক্ষ টাকা খুইয়েছেন অনেকেই।
মূলত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই এই প্রতারণা ব্যবসা শুরু হয়েছে। প্রথমে ইউরোপে প্রতারকরা হাত বাড়ালেও ধীরে ধীরে ভারতের বাজারে প্রবেশ করেছে। এমনকী এরাজ্য সহ দেশজুড়ে নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে বসেছে সাইবার অপরাধীরা। করোনা থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ব্যক্তিদের মধ্যে কারা কারা প্লাজমা দিয়েছেন, তদন্ত করতে গিয়ে পাওয়া যাচ্ছে তার তালিকাও। এসব দেখিয়ে দাবী করা হচ্ছে, প্লাজমা থেরাপির মাধ্যমে করোনা চিকিৎসা সম্ভব।
অথচ এই পদ্ধতি নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে ভারতে। তালিকা দেখে অনেকেই লোভে পড়ে আত্মীয় বা বন্ধু-বান্ধবদের জন্য প্লাজমা কিনতে রাজি হচ্ছেন। এর বিনিময়ে নেওয়া হচ্ছে দুই থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা। অনলাইনে চলছে টাকার আদান-প্রদান। অফিসারদের নজরে এসেছে, দু-একবার লেনদেনের পর এমন একটি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে আবার নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে। ভুয়ো নামেও অ্যাকাউন্ট খোলার হদিশ মিলছে।
শুধু প্লাজমা নয়, করোনার ভুয়ো ভ্যাকসিন তারা লাখ লাখ টাকায় বিক্রী করছে। এমনকি তা কিনছেনও অনেকে। হাতে আসার পরই অর্ডার দেওয়া ব্যক্তি জানতে পারছেন, ভ্যাকসিনের নামে তাতে জল ভরে পাঠানো হয়েছে। লোভে পড়ে অনেকেই মোটা অঙ্কের টাকা গচ্চা দিয়েছেন। গোয়েন্দাদের কাছে সবচেয়ে চিন্তার বিষয়টি হল, হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নেটে মিলছে। তবে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন বলে যা বিক্রী হচ্ছে, তা আসল নয়।
সেই কারণেই গোয়েন্দাদের পরামর্শ, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে কেউ কোনও লিঙ্ক পাঠালে তাতে ক্লিক করা থেকে শতহস্ত দূরে থাকতে হবে। আর প্লাজমা বা করোনার ভ্যাকসিন কেনার জন্য কেউ টোপ দিলে, যেন এই ফাঁদে কেউ পা না দেন। এর সঙ্গেই স্পেশাল সফটওয়্যার-এর মাধ্যমে ডার্কনেটের দুনিয়ায় ঢুকে কীভাবে প্রতারকদের হদিশ পাওয়া যায়, তার চেষ্টাও চলছে।