বাম আমলের অস্ত্র ভাণ্ডার কুখ্যাত শাসনের ভেড়ি এখন পর্যটনের ঠিকানা

প্রায় ৪৪ লক্ষ টাকা খরচ করে গড়ে তোলা হয়েছে এই শিশু উদ্যান। যা আশপাশের জনপ্রিয় পিকনিক স্পটকে টেক্কা দিতে সক্ষম।

December 3, 2021 | 2 min read
Published by: Drishti Bhongi

দিগন্ত বিস্তৃত ভেড়ির মাঝখানে এক ফালি সবুজ জমি। যেন জলরাশির মাঝে জেগে উঠছে একখানা আস্ত দ্বীপ। তাতে ইট দিয়ে তৈরি টালির ঘর। এক সময়ে সেই ঘরেই থরে থরে সাজানো থাকতে হরেক অস্ত্র। ওয়ান শটার পিস্তল থেকে দো’নলা বন্দুক, রিভলভার, গুলি ও হরেক সাইজের বোমা, কী না থাকত সেখানে। রাত বাড়লেই অস্ত্র হাতে মহড়ায় মেতে উঠত বাহিনী। শাসকদলের বিরুদ্ধে কণ্ঠস্বর চড়ালেই বিপদ ছিল সেই সময়। কারও বুক এফোঁড়-ওফোঁড় হয়েছে গুলিতে, কাউকে আবার খুন করা হয়েছে কুপিয়ে। বাম জমানায় শাসনের সেই ‘অস্ত্র ভাণ্ডার’ এখন পরিণত হয়েছে শিশুদের কলতানের কেন্দ্রে। প্রায় ৪৪ লক্ষ টাকা খরচ করে গড়ে তোলা হয়েছে এই শিশু উদ্যান। যা আশপাশের জনপ্রিয় পিকনিক স্পটকে টেক্কা দিতে সক্ষম। প্রায় দু’বছর বন্ধ থাকার পর বুধবার ধুমধাম করে এই শিশু উদ্যান খুলে দেওয়া হল এলাকাবাসীর জন্য।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাম জমানায় এই শাসন চলত মজিদ মাস্টারের কথায়। খুন, সন্ত্রাস, ভেড়ি দখলের রাজনীতিকে কেন্দ্র করে রক্তের হোলি খেলা হতো দিনে-দুপুরে। মজিদ বাহিনীর চোখ এড়িয়ে এই মহল্লায় প্রবেশ করা কার্যত দুঃসাধ্য ছিল। সেই শাসনের ৬ নম্বর ভেড়ি লাগোয়া এক চিলতে ফাঁকা জায়গায় তৈরি হয়েছিল অস্ত্র ভাণ্ডার। বিরোধী স্বরকে চাপা দিতে বিহারের মুঙ্গের থেকে আনা হতো নানা ধরনের অস্ত্র। সে সব মজুত করা হতো মজিদ মাস্টারের বাড়ি লাগোয়া ওই টালির ঘরে। পরে তা আমডাঙা, হাড়োয়া সহ জেলার বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হতো। সন্ধ্যা হলেই ভেড়ির মাঝে ওই ফাঁকা ঘরের সামনে শুরু হতো বোমা বাঁধার কাজ। মাঝেমধ্যে টেস্ট করা হতো বোমা। যখন এই পরীক্ষা নিরীক্ষা চালানো হতো, তখন প্রায়ই কেঁপে উঠত গোটা এলাকা। ২০১০ সালে ওই জায়গায় গুলি করে খুন করা হয় তৃণমূল কর্মী নুর আলিকে। ওই বছরই দুর্গাপুজোর সময় নৃশংসভাবে খুন হন আরেক তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী মহানন্দ সর্দার। একটা সময় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল যে, দিনের বেলাতেও ওই এলাকায় যাওয়ার সাহস দেখাত না গ্রামবাসীরা।

২০১১ সালে পালাবদলের পর বদলাতে শুরু করে পরিস্থিতি। জনরোষে তছনছ হয় সেই অস্ত্র ভাণ্ডার, টালির ঘর। পুলিস প্রচুর অস্ত্র উদ্ধার করে। ২০১৩ সালে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে ওই একচিলতে জায়গায় মাটি ফেলে বাড়ানো হয় পরিসর। এরপর শাসন গ্রাম পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল ও চতুর্দশ অর্থ কমিশনের টাকায় ধাপে ধাপে গড়ে ওঠে শিশু উদ্যান। মিনি নাগরদোলা, দোলনা সহ খেলার হরেক সরঞ্জামে সেজে উঠেছে এই উদ্যান। পাশের ভেড়িতে বোটিংয়ের জন্য ছ’টি নৌকাও রাখা হয়েছে। এছাড়াও রয়েছে বনভোজনের জন্য আলাদা ব্যবস্থা। শাসন গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য তথা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বারাসত ২ নম্বর ব্লকের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম বলেন, ওই অস্ত্র ভাণ্ডার থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে অস্ত্র সরবরাহ করা হতো। কতজন খুন হয়েছেন, তার ইয়ত্তা নেই। সেই আতঙ্ক মানুষের মন থেকে মুছতেই আমরা শিশু উদ্যান ও পিকনিক স্পট তৈরি করেছি।

TwitterFacebookWhatsAppEmailShare

ভিডিও

আরও পড়ুন

Decorative Ring
Maa Ashchen